খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় স্কুলশিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জুম্ম ছাত্র জনতার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত আরও ৪ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক আহসান হাবিব পলাশ আজ রোববার সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নিহতদের মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবেরও ৩ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'সদর হাসপাতালে ৩ জনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়।'
জুম্ম ছাত্র জনতার অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ আজ রোববার তৃতীয় দিনে প্রবেশ করায় খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে গুইমারার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে।
তারা বলছে, গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় ৩ জন পাহাড়ি নিহত এবং মেজরসহ ১৩ সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ ৩ পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে এ মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
ততক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণপূর্বক শান্ত থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয়রা জানায়, অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে আজ বিকেলে গুইমারার রামেসু বাজারে আগুন দেওয়া হয়। বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়, আগুন ছড়িয়ে গেলে আশেপাশের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে অবস্থিত।
আগুনের ভিডিও এবং ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ দোকান মালিক স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর গুইমারা উপজেলায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় টহল দিচ্ছে।
আগের দিন অবরোধ সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একে অপরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করে, এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায় বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মংসাজাই মারমা এবং কংজারি মারমা জানান, তারা একটি খাদ্য গুদামের সামনের রাস্তায় অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন।
তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে লোকজন পালিয়ে যায়।
পরে, কয়েকজন মুখোশধারীসহ প্রায় ২০-২৫ জন এসে রামেসু বাজার এবং আশেপাশের বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তারা। এসময় কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, 'অবরোধকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।'
খাগড়াছড়িতে আজ সকাল থেকে স্থানীয় ও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। শহরজুড়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বরে সকালে যানবাহন বা ভিড় দেখা যায়নি। নিরাপত্তাকর্মীরা কয়েকজন পথচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও পরীক্ষা করছিলেন।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে অষ্টম শ্রেণীর ওই শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
পরদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩ জনের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শয়ন শীল নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ৬ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মন্তব্য
আপনার মতামত দিন
সাম্প্রতিক মন্তব্য
সাকিব আহমেদ
২ দিন আগেখুব গুরুত্বপূর্ণ একটি খবর। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঠিক প্রতিফলন দেখা গেছে। ধন্যবাদ!