শারদীয়ার হাওয়া লাগতেই সেজে উঠছে প্রতিটি পাড়া, মহল্লা আর শহর। পূজামণ্ডপগুলো যেন শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়—সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি ও কল্পনার মেলবন্ধনে তৈরি একেকটি জীবন্ত গল্প।

থিমভিত্তিক পূজার এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন সংগঠনও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজর কাড়ার মতো থিম আর মনকাড়া মণ্ডপসজ্জায় যেন দর্শনার্থীদের জন্য এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে।

নজরকাড়া গেট, বিস্তৃত আলোকসজ্জা ও সুউচ্চ প্রতিমাসহ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করার কোনো কমতি রাখছে না আয়োজকরা। গ্রামীণ পাড়া থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র পর্যন্ত রঙ ও সৃজনশীলতা কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেয়েছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক সজল বৈদ বলেন, 'থিমভিত্তিক পূজা ও মণ্ডপের সজ্জা এখন ভীষণ গুরুত্ব পাচ্ছে দর্শনার্থীর আকর্ষণ বাড়ছে বলে। তাই থিমকে আকর্ষণীয় করতে ও আয়োজনকে উৎসবমুখর করতে সংগঠক ও আয়োজকদের এখন দিনরাত একাকার হয়ে আছে।'

শহরের চাদনিঘাট ব্রিজের সঙ্গেই পূজার আয়োজন করেছে হরিজন যুব সংঘ। পূজামণ্ডপের তোরণকে আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তুলতে পুরোদমে সাজ চলছে। ককশিটে তৈরি তোরণটি এর মধ্যে অনেকটা সেজে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

মৌলভীবাজার হরিজন যুব সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রী রাহুল বাসফর বলেন, 'আমাদের এবারের থিম হচ্ছে ভগবান শিবের বিশ্বরূপ। ভগবান শিবের মূর্তিটির উচ্চতা হবে ২০ ফুট। কার্যক্রম চলমান আছে, শেষ হলে আরও সুন্দর লাগবে। এবার মৌলভীবাজারের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হবে বলে আশা করছি।'

মনু নদীর তীরে সৈয়ারপুর এলাকায় ত্রি-নয়নী শিববাড়ি সার্বজনীন দুর্গা উৎসব পরিষদ একটি আধ্যাত্মিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে—যেখানে ১২টি দেবতার মূর্তি রয়েছে।

পরিষদের সভাপতি স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী বলেন, 'আমাদের মণ্ডপে সারা বছর ধরে পূজিত দেবতাদের প্রদর্শন করা হয়। দর্শনার্থীরা চাইলে আলাদা আলাদা প্রার্থনাও করতে পারেন।'

কাশীনাথ আলাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে মহেশ্বরী পূজা উদযাপন পরিষদের অত্যন্ত যত্ন সহকারে তৈরি প্রবেশদ্বার মনোযোগ আকর্ষণ করছে। দেশ-বিদেশের প্রায় ৩৫০ জন সদস্য এই উদযাপনের সঙ্গে জড়িত।

'এ বছর আমরা প্রবেশপথটিকে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তোলার ওপর বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি,' বলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দোলন কুমার দাস।

একজন আয়োজক সোহান চক্রবর্তী বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকর্ষণ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কয়েকডজন স্বেচ্ছাসেবক আমাদের মণ্ডপে রাতদিন কাজ করছেন। মানুষজন ছবি তোলার জন্য ভালো জায়গা চায় এবং আমরা তাদেরকে ঠিক সেই জায়গাটি দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

হরিজন যুব সংঘের কাজ দেখতে আসা রাজ দাস বলেন, 'হরিজন যুব সংঘের আয়োজনটি এবার খুবই ইউনিক। অপেক্ষায় আছি কবে শেষ হয়।'

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিম দে বলেন, 'জেলায় এ বছর ৯৯৩টি প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বজনীন ৮৬৭টি ও ব্যক্তিগত ১২৬টি।'

মৌলভীবাজারের বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রতিমা রঙ করা ও প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবক ও শিল্পীরা গভীর রাত পর্যন্ত তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য। জনবহুল এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য নিয়মিত টহল থাকবে।'