আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট আয়োজনের জন্য কমিশনকে শক্ত অবস্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। 

নির্বাচনে প্রশাসনিক প্রভাব, কালো টাকা ও অনিয়ম ঠেকাতে ইসিকে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেন দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। 

সংলাপে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ ইসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধির ১৪ জন অংশগ্রহণ নেন।

সংলাপে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, 'এই নির্বাচনটা বাংলাদেশের জন্য একটা ট্রানজিশন। এটার মাধ্যমেই বোঝা যাবে আগামীর বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে। আজ আপনারা যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছেন, সেটা নিয়েই আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।'

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, '৫৫ বছর পরও নারীদের জন্য মাত্র ৫-৭ শতাংশ আসনের কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না।'

পুলিশ রিফর্ম কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী বলেন, 'ভোটাররা স্থানীয় পর্যায়ে যেন নিরাপত্তা পায়, তা এখনই দৃশ্যমান করতে হবে। অনেক প্রার্থী পোলিং এজেন্ট দিতে পারে না। বড় দলগুলো ভয়ভীতি দেখায়। এটা যেন না হয় তা কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।'

পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া, মানুষকে না জানিয়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। তিনি বলেন, 'এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে যদি ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে, তাহলে স্বর্ণাক্ষরে ইসির নাম লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।'

সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, 'আমরা কারিগরি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে কম আলোচনা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার, ইসি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন মানেই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে জিততে চাওয়া। সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হিসেবে যে শক্তি আসবে আমরা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।'
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের কাছে একটা অনুরোধ...সত্যি যদি আপনাদের মেরুদণ্ড থাকে, যদি আপনারা চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন তাহলে আপনারা সফল হতে পারবেন।'

সব আসনে 'না' ভোটের রাখার দাবি তুলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, 'নতুন বিধিমালা অনুযায়ী কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে তাকে "না" ভোটের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।'

জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান বলেন, 'নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। এখনো প্রশাসনে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা রয়েছে,  তারা বাধা দেবে, কিন্তু ইসিকে সজাগ থাকতে হবে।'

বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন, 'এই সংলাপ যেন সংলাপ হয়েই না থাকে। আমরা চাইবো সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।'

সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, 'আমরা নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাই। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগতম জানাব, দেশীয় পর্যবেক্ষক যতটা পারি বেশি নিবন্ধন দিতে চাই। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের পরামর্শ বাস্তবায়ন করার। অতীতের মতো হবে না। আমরা অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা ফিরিয়ে এনেছি।'
 
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম দফার এ সংলাপে প্রথমে ডাক পান সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবিরা। অক্টোবরে রাজনৈতিক দল, নারী নেত্রী, জুলাই যোদ্ধা, গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।