ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি প্রায় ২০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা এবং এক মাসের মধ্যেই প্রচারনা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কয়েক দফা অভ্যন্তরীণ জরিপ হয়ে গেছে। এখন সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সব তথ্য সংগ্রহ শেষে সেগুলো স্থায়ী কমিটিতে উত্থাপন করা হবে। এই কমিটিই সংসদীয় বোর্ড হিসেবে কাজ করে এবং মনোনয়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
এরপর দল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে এবং ভোটের মাঠে শক্ত উপস্থিতি ও নির্বাচনী গতি তৈরির লক্ষ্যে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করবে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়ন প্রসঙ্গে তার মতামত তুলে ধরেন।
সূত্র জানায়, আলোচনায় আরও উঠে আসে তৃণমূলের উদ্বেগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পরাজয়ের পর বিএনপি আর দেরি না করে প্রচারণা শুরু করতে চায়।
আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়, জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং প্রচারণা শুরু করেছে। বিএনপি নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিএনপি যদি শুধু আন্দোলন ও রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ব্যস্ত থাকে, তাহলে জামায়াত আগে প্রচারণা শুরু করে মাঠে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে।
যোগাযোগ করা হলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, এলাকাভিত্তিক জরিপ চলছে, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সিভি যাচাই করা হচ্ছে এবং সাক্ষাৎকারও চলছে।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হলো, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা। আমরা এর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'
অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা
একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ইতোমধ্যেই বিভাগীয় কমিটিগুলোর দায়িত্বে থাকা সংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
এখন দলটি একাধিক প্রার্থী থাকা আসনগুলোতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে এবং মনোনয়ন নিয়ে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব বরদাশত করা হবে না।
এ ছাড়া দলীয় নেতারা নির্বাচনী আসনভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে। এ সময়ে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন অঞ্চলে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা টিকিট পাওয়ার আশায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজর কাড়তে পোস্টার-ব্যানার ব্যবহার শুরু করেছেন।
২০ সেপ্টেম্বর লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে।
তিনি বলেন, যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন তা যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
সূত্র জানায়, প্রার্থীরা ঋণখেলাপি, মামলা বা অন্য কোনো কারণে অযোগ্য প্রমাণিত হলে বিকল্প হিসেবে অনেক আসনে বিএনপি ব্যাকআপ প্রার্থী রাখবে।
আসন ভাগাভাগি
নিজেদের প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি বিএনপি আসন ভাগাভাগি নিয়ে সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে এবং জোট আরও বড় করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি তার সমমনা দলগুলোর জন্য প্রায় ৫০টি আসন ছেড়ে দিতে পারে।
বিএনপি যদি আরও বড় জোটে যেতে চায়, তাহলে আরও বেশি আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে। সে কারণেই দলটি প্রাথমিকভাবে ২০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছে।
গত বছরের অক্টোবরে বিএনপি তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছিল, সমমনা দলের ছয় শীর্ষ নেতাকে সমর্থন জানাতে।
তারা হলেন—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪); নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২); গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২); গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩) ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২); এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫)।
সম্প্রতি বিএনপি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে ঢাকা-১৭ আসনে এবং ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে ঢাকা-১৩ আসনে সবুজ সংকেত দিয়ে স্থানীয় ইউনিটগুলোকে তাদের জন্য কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমরা এই দুটি আসনের নেতাকর্মীদের দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্থ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার দল ও বিএনপির মধ্যে কয়েকটি আসন নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সর্বশেষ ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নিয়েছিল এবং সহযোগীদের জন্য ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল।
ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থীরা ওই নির্বাচনে সাতটি আসনে জয়ী হয় এবং আনুপাতিক হারে একটি সংরক্ষিত নারী আসন পায়। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি।
২০০৭ সালের পর থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০টি আসন পেয়েছিল; ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়অ ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০২৪ সালের নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
যোগ্যতা, ইশতেহার
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি ২০১৮ সালের প্রার্থীদের পাশাপাশি নতুন প্রার্থীদেরও বিবেচনায় নেবে।
আওয়ামী লীগের শাসনামল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা, নিষ্ঠা, সততা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনার পতনের পর যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে এবং যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে, তাদের বাদ দেওয়া হবে।
মনোনয়ন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহসহ আরও অনেকে রয়েছেন।
এদিকে বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে। এতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি এবং ২০১৬ সালে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনা, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
আমীর খসরু বলেন, এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। 'আমাদের ইশতেহার হবে বিষয়ভিত্তিক।'
মন্তব্য
আপনার মতামত দিন
সাম্প্রতিক মন্তব্য
সাকিব আহমেদ
২ দিন আগেখুব গুরুত্বপূর্ণ একটি খবর। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঠিক প্রতিফলন দেখা গেছে। ধন্যবাদ!