বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে খুবই পিছিয়ে রয়েছেন নারীরা। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা ১০ শতাংশেরও কম।

সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত ১১৮ জন বিচারকের মধ্যে মাত্র ১১ জন নারী। তাদের মধ্যে হাইকোর্টে ১০ জন এবং আপিল বিভাগে মাত্র একজন।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ জন প্রধান বিচারপতির নিয়োগ দেওয়া হলেও দেশের সর্বোচ্চ এ পদে কোনো নারী বসেননি।

এ ছাড়া, গত পাঁচ দশকে হাইকোর্ট থেকে মাত্র পাঁচজন নারী বিচারককে আপিল বিভাগে উন্নীত করা হয়েছে।

এই বৈষম্য নিম্ন আদালতেও স্পষ্ট। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পুরুষ বিচারক আছেন ১ হাজার ৬৯১ জন, আর নারী বিচারক মাত্র ৪৯৬ জন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা তরুণীদের বিচার বিভাগে ক্যারিয়ার গড়তে নিরুৎসাহিত করে। এ অবস্থায় বিচার বিভাগে নারীর স্বল্প প্রতিনিধিত্ব দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, 'উচ্চ আদালতে নারীদের অগ্রগতিতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক সময় পুরুষপ্রধান সিনিয়র আইনজীবী নেটওয়ার্ককে প্রাধান্য দেয়। এ ছাড়া, মাতৃত্ববান্ধব নীতি না থাকা এবং নারীরা জটিল বা সংবেদনশীল মামলা সামলাতে পারবে না—এমন ধারণাও বড় বাধা।'

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে নারী বিচারকের স্বল্প উপস্থিতি আমাদের বিচারব্যবস্থার গুরুতর ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন।'

ইশরাত বলেন, 'এই সংকটের কারণে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আদালত—বিশেষ করে নারী নির্যাতন, পারিবারিক বিরোধ ও নারীর অধিকার সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে।'

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী শুক্লা সরওয়াত সিরাজ বলেন, 'সরকারি চাকরিতে নারীদের কোটা বাতিল হওয়ায় তাদের সুযোগ আরও সীমিত হয়েছে।'

তিনি বলেন, কোটা বাতিলের এক বছর কেটে গেলেও কোনো সংস্কার কার্যকর করা হয়নি। অথচ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরুটাই হয়েছিল কোটা সংস্কার নিয়ে।

তিনি বলেন, 'বিচার বিভাগীয় সেবায় নারীদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।'

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ পারভিন বলেন, 'আমাদের সমাজ এখনো পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বের হতে পারেনি।'

তিনি বলেন, 'নিম্ন আদালতে নারী বিচারকরা ভালো করছেন। কিন্তু অনেকেই হাইকোর্ট পর্যন্ত উঠতে পারছেন না। গত আগস্টে হাইকোর্টে ২৫ জন বিচারপতি নিয়োগ পেলেও তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন নারী।'

পরামর্শ

শুক্লা বিচার বিভাগে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক পদ সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন।

ইশরাত স্বচ্ছ ও লিঙ্গসংবেদনশীল নিয়োগনীতি, নারীদের আইন পেশায় ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ এবং লিঙ্গভিত্তিক ধ্যানধারণা ভাঙার প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, সম্প্রতি প্রণীত সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী এখন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে সর্বোচ্চ আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, গত বছর আগস্টে সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুটি ধাপে হাইকোর্টে মোট ৪৮ জন বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। প্রথম ধাপে চারজন এবং দ্বিতীয় ধাপে আরও তিনজন নারী বিচারক নিয়োগ পেয়েছেন।

মোয়াজ্জেম আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি নারী প্রার্থী হাইকোর্টের বিচারপতির পদে আবেদন করবেন এবং এতে উচ্চ আদালতে তাদের সংখ্যা বাড়বে।